শনিবার , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কক্সবাজার

পেকুয়ার যুবলীগ নেতা গরু জাহাঙ্গীরের স্বীকারোক্তি

‘টর্চার সেলে’ হত্যার পর শিক্ষক আরিফের লাশ গুম’

জমি বিরোধের জেরে প্রথমে অপহরণ করা হয় পেকুয়ার স্কুল শিক্ষক আরিফকে। অপহরণের পর তার পরিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মরদেহ গুম করতে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত পুকুরে বস্তাবন্দি অবস্থায় ডুবিয়ে রাখা হয়।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকা থেকে শিক্ষক আরিফ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পেকুয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমকে আটকের পর আজ রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব।

রবিবার দুপুরে কক্সবাজার র‍্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) মধ্যরাতে র‍্যাব-১৫ ও র‍্যাব-৭ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানার পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায় বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

তিনি জানান, পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আরিফের সঙ্গে প্রতিবেশী যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এই বিরোধের সূত্র ধরে ৫ আগস্টের পর আরিফকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করে জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীর এবং অপর আটক রুবেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দুই সপ্তাহ ধরে চলমান অভিযানের মাধ্যমে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে এবং মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায়, তিনি শিক্ষক আরিফকে অপহরণ, ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আরও তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর আরিফকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের ১৪ দিন পর গত ১১ অক্টোবর আরিফের বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে আরিফের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মোহাম্মদ আরিফের বসতভিটার পাশে জাহাঙ্গীর আলম এবং তার ভাই যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আজমগীরের বসতভিটা। দুই ভিটার দুজনের বসত ঘরের দূরত্ব ১২ থেকে ১৫ ফুটের মধ্যে। দুই পরিবারের মধ্যে বসতভিটা এবং জমিসংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি দীর্ঘদিনের পুরানো। আর এই জের ধরেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৪৫ এর দিকে নিজ এলাকা থেকে শিক্ষক আরিফকে অপহরণ করা হয়। পরে মুক্তিপণ দাবি করে। ঘটনার পর থেকে স্বজনরা দাবি করে আসছিল যুবলীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং তার ভাই যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আজমগীর মিলেই শিক্ষককে অপহরণ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবিত মিলেনি শিক্ষক আরিফকে।

১৪ দিন পর দুই ভিটার মধ্যবর্তী পরিত্যক্ত পুকুরে মিলেছে বস্তাবন্দি মরদেহ। যেখানে ইট ভর্তি করে বস্তাবন্দি মরদেহটি রাখা হয়েছিল পুকুরে। মরদেহ উদ্ধারের পর উত্তেজিত জনতা যুবলীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং তার ভাই যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আজগীরের বাড়ি এবং মালিকানাধীন মার্কেটে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আংশিক পুড়ে যাওয়ার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আর এর পরই পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে বাড়ির একটি কক্ষে রক্তের দাগ এবং হত্যা আলামত পেয়েছে পুলিশ। তার উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

পেকুয়া থানার ওসি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, অপহরণের ১৪ দিন পর শিক্ষক আরিফের মরদেহ গত শুক্রবার নিজ বাড়ির পুকুরে থেকে ভাসমান অবস্থায় বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষ করে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দায়ের করা মামলায় রুবেল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার কাছ থেকে।

তিনি বলেন, এ ঘটনার জন্য জাহাঙ্গীর ও আজমগীর দুই ভাইকে দায়ী করছেন স্বজনরা। তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি কক্ষে রক্তের দাগ ও আলামত পাওয়া গেছে। এটা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এই দাগ কার রক্তের।”


সম্পর্কিত খবর

Flight Centre

Demo Description

This will close in 20 seconds