বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিল্প-অর্থনীতি

উৎপাদন বন্ধের শঙ্কায় মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র

আওয়ামী সরকারের সময়ে ঋণ নির্ভর যে কয়টি মেগা প্রকল্প নেওয়া হয় তারমধ্যে অন্যতম মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়েক দফায় ব্যয় বেড়ে বর্তমানে ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ানো এই প্রকল্প সরকার পতনের সাথে সাথে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা ঝুকি ও কয়লা সংকট।

বর্তমানে ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গভাবে উৎপাদনে থাকলে শীঘ্রই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেড়েছে প্রকল্পটিতে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি কেন্দ্র ২০২৩ সালের জুলাই ও ডিসেম্বরে দু দফায় চালু হয়। কেন্দ্রগুলো কমিশনিং করার জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। চুক্তি অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সর্বশেষ সরবার দেয় আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। তাদের সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে আর মাত্র একমাসের মতো।

নিয়ম অনুযায়ী সুমিতমোর সরবরাহ করা কয়লা শেষ হওয়ার আগেই কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কয়লা কেনার কথা থাকলেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কয়লা কেনা আটকে গেছে। আদালত পর্যন্ত গড়ানো বিষয়টি বর্তমানে রায়ের অপেক্ষায় আপিল বিভাগে ঝুলে রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে বেআইনি সুবিধা দিতে ১০ মাস দেরি করে। শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ তুলে কনসোর্টিয়াম অব বসুন্ধরা, ইকুইন্টিয়া ও অথ্রোর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাই মাসে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন, আইনগত বিষয়গুলো তাদের ঢাকা হেড অফিস থেকে দেখা হচ্ছে, তাই সেই বিষয়ে তারা জানেন না। তবে কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই তাদের কাছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন- সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে আর মাত্র একমাসের মতো। তারপরে কি হবে এখন বরা মুশকিল। এক প্রকার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কয়লা আমদানি করা না গেলে এটি হয়তো এখানেই বন্ধ করে দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে প্রকল্পের ভেতর থেকে কোটি কোটি টাকা দামের মূল্যবান বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। গত ৩১ আগস্ট প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধান প্রকৌশলী মুনিরুজ্জামানের নির্দেশে জাহাজে করে সরিয়ে নেওয়ার সময় ১৫ কোটি টাকার তামার ক্যাবল জব্দ করা হয়। আটক করা হয় এর সাথে জড়িত ৫ জনকে। এই ঘটনায় প্রকল্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আসামী করে মামলা করেছেন।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও মীর্জানুল ইসলাম বলেন, শুধু ৩১ আগস্ট নয়, এর আগেও পসকোর নাম ব্যবহার করে দুই কন্টেইনার মালামাল বের করেছিলো প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। এছাড়া গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তরাও রাতে প্রকল্পে ঢুকে লুটপাটের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবী তাদের।

২০২৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এই কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৬ ইউনিট বিদ্যুৎ। কয়লা আমদানি জটিলতা দ্রুত শেষ না হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে প্রকল্পটির।


সম্পর্কিত খবর

Flight Centre

Demo Description

This will close in 20 seconds