বনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে হিমছড়ি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। অভিযোগ পাওয়া গেছে এই কাজের সঙ্গে জড়িত ফরেস্টার থেকে নিরাপত্তা রক্ষীরাও। আর এতে করে হিমছড়ি ও পেঁচার দ্বীপ এলাকাটি পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বন টহল ফাঁড়ির ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন ও মো. তানভীর আলম, এফজি নাজমুল হাছান ও বাগান মালি মো. সোহেল আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে হিমছড়ি উদ্যানের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত।
জানা গেছে, তারা নিজেরাই লোক পাঠিয়ে রাতের অন্ধকারে কেটে নিচ্ছে বনের গাছ। সামান্য টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে এই অমূল্য সম্পদ। সেইসঙ্গে গাছ কেটে জমি ফাঁকা করে অর্থের বিনিময়ে সেই জমিতে অবৈধভাবে মানুষের বসতি গড়ে তোলার অনুমতি দিচ্ছে। বনের জমির ভেতর পাকা দালানের অনুমতি না থাকলেও বনবিভাগের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও পাকা দালান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং বিএস ২ নং খতিয়ানের বিএস ১৯ নং দাগের শ্রেণী পাহাড় রির্জাভ ফরেস্টের জমিতে দক্ষিণ পেঁচারদ্বীপ গ্ৰামের হেডম্যান হিসেবে কর্মরত সাগর আলি বিল্ডিং তৈরি করেছেন। সেই বিল্ডিং-এ তিনি বাসা ভাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে জঙ্গল ধোয়া পালং মৌজায় বিএস ২ নং খতিয়ানের বিএস, ২১ নং দাগে শ্রেনী পাহাড়ে মোঃ হাসেমের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। হারুন গং দুই তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছেন। হুমায়ন নামে একজনের মালিকানা ৫ তলা একটি রিসোর্ট রয়েছে। এই রিসোর্ট থেকে আয় হচ্ছে লাখো কোটি টাকা। মেরিন ড্রাইভ রোডের পূর্ব পাশে জঙ্গল খুনিয়া পালং মোজার বিএস ২ নং খতিয়ানের শ্রেণী পাহাড় রির্জাভ ফরেস্টের বিএস ৪৩ নং দাগে বিল্ডিং নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের বন রক্ষকরাই বনের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এভাবে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে ওই এালাকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ইকো সিস্টেম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জানান, রাতের আঁধারে গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। এফজি নাজমুল হাছান ও বাগান মালি মো. সোহেল আহমেদ সরাসরি জড়িত এই কাজে। তারা কাজ করেন ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন ও মো. তানভীর আলমের নির্দেশনাক্রমে কাজ করে। আমরাও যেহেতু খাস জমিতে বসবাস করি আমাদের নাম জানলে অনেক হয়রানি করবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফরেস্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন বলেন, আমি হিমছড়ি বিটের দায়িত্বে আছি। এগুলো আমার এলাকায় পড়েনি। এটা খুনিয়াপালং বিটে পড়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা।
খুনিয়াপালং বিটের ফরেস্টার মো. তানভীর আলমের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানকে রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারকে এই মূহূর্তেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তারা বন রক্ষা না করে ভক্ষণ করার কাজে ব্যস্ত। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব কুকর্মের সাথে জড়িত। বন বিভাগের গাফেলতির কারণে কক্সবাজারের বনভূমি দিনদিন কমে যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সচেতন না। তারা কিভাবে বনের জমি এবং গাছ বিক্রি করে নগদ টাকা কামানো যায় এগুলো নিয়ে ব্যস্ত। এদের উপর রাষ্ট্র, এডমিনিস্ট্রেশন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কক্সবাজার
হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানে বনবিভাগের সহায়তায় উঠছে দালান-কোঠা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ : ৩ দিন আগে