রামুর পেঁচারদ্বীপ এলাকায় চাঁদা না পেয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে নির্মিত স্থাপনায় ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে ধেছুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সেলিম উল্লাহ ও রামু উপজেলা ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত (কানুনগো) মাহবুবুর রহমান সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী ‘মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেড’ কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগে বলা হয়, ‘মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেড’ ব্যবসায়িক সাফল্যে কিছু ব্যক্তি ঈর্ষান্বিত হয়ে ব্যক্তি শক্রতামূলক আচরণ শুরু করে। সম্প্রতি চক্রটি প্রত্যক্ষভাবে ধেছুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সেলিম উল্লাহ ও রামু উপজেলা ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত (কানুনগো) মাহবুবুর রহমান সার্ভেয়ার সুকৌশলে চাঁদা দাবি করে আসছিল। সেলিম উল্লাহ চিহ্নিত টেকনিক্যাল চাঁদাবাজ, সুপরিচিত ঘুষখোর ও ব্ল্যাকমেলিং করে অর্থ আদায়ে পারদর্শী লোক। দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সেলিম উল্লাহকে ইতিপূর্বে চাকরিচ্যুত করা হয়। সম্প্রতি নানা কৌশলে চাকরিতে পুনর্বাসিত হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে পড়ে। দাবিকৃত অর্থ না দিলে এলাকায় ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না সম্প্রতিএমন হুমকি-ধমকি দেয় ‘মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেড’ কর্তৃপক্ষকে।
মারমেইড বিচ রিসোর্টে সুইমিং পুল, কটেজ, শিশুদের খেলাধুলার মাঠ ও লন রয়েছে। রিসোর্ট থেকে পশ্চিমের খোলা জায়গায় দিয়ে পর্যটকদের সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার সুবিধার্থে নিজস্ব মালিকানাধীন জায়গায় একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করা হয়। কিন্তু, অভিযুক্ত সেলিম উল্লাহ ও মাহবুব আলম অবৈধ আর্থিক সুবিধা (ঘুষ) ও চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে নানা মিথ্যা কল্পকাহিনী রচনা করে। খরিদকৃত জোত জমিকে খাস জমি নামে মিথ্যা অভিযোগ করে। এমনকি কোন নোটিশ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সম্প্রতি এই কাঠের সেতুটি ভাংচুর করে। শুধু তাই নয়, প্রবল আক্রোশে ভাংচুরকৃত স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, দুর্নীতিবাজ সেলিম উল্লাহ ইতিপূর্বে জালিয়াতির মাধ্য ১৪/০৬/১৯৬২ তারিখের ৪৮৫৩ দলিলকে পরিবর্তন করে ১৯৮২ সালের দলিল বানিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নামজারী ও জমাভাগ করে ৪৬৯ নং খতিয়ান তৈরি করেছে। প্রতারণার মাধ্যমে তৈরিকৃত নামজারী মামলার প্রস্তাবনা, প্রতিবেদন ও তৈরিকৃত ৪৬৯ নং খতিয়ানে তার স্বাক্ষর রয়েছে। শুধু তাই নয় ৪৬৯ নং খতিয়ান থেকে সেলিম উল্লাহ পরবর্তীতে নামজারী ৫৪০, ৫২৮ ও ৯৭৬ খতিয়ান তৈরি করে। এই জঘন্য জালিয়াতির কারণে জেলা প্রশাসকের রাজস্ব আদালতে মামলাও করা হয়।
সেই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। আদালতে বিচারাধীন মামলার বিষয় গোপন করে বেআইনীভাবে তিনি মারমেইডের স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণে কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় মারমেইড কর্তৃপক্ষের। এছাড়া তিন কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। ভাঙা সেতুটির কারণে বিদেশি পর্যটকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ কারণে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে মারমেইড কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সেলিম উল্লাহ ও মাহবুব আলমের অপসারণসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কক্সবাজারের বিখ্যাত মারমেইড বিচ রিসোর্টে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করে। রিসোর্টের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন তারা। পরিবেশ বান্ধব এ রিসোর্টে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে ব্যতিক্রম ধর্মী কটেজ ও রেস্তোরাঁ। পর্যটকদের প্রশান্তির জন্য রয়েছে প্রশস্ত লন। রিসোর্টটির বৈচিত্র্যময় খাবার পরিবেশনা শুধু দেশীয় পর্যটক নয়, বিদেশি পর্যটকদেরও ব্যাপক হারে আকর্ষণ করে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায় সরকার। স্থানীয় বহু লোকের কর্মসংস্থানও হয়েছে মারমেইডে। কিন্তু ভূমি সহকারি সেলিম উল্লাহ ও সার্ভেয়ার মাহবুব আলমের অবৈধ কর্মকাণ্ডে বহু স্থানীয় মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভূমি সহকারী সেলিম উল্লাহকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার মোবাইলে ফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তার উত্তরে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। আর এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।