শুক্রবার , ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কক্সবাজার

শনিবারই বন্ধ হচ্ছে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ

Oplus_131072

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সিদ্ধান্ত মতে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমনের শেষ তারিখ ৩১ জানুয়ারি। ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বীপটিতে পর্যটক ভ্রমনে নিষিধাজ্ঞ রয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত মতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচলের অনুমতি রয়েছে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। দ্বীপের বাসিন্দা, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর দাবি জানালেও এ পর্যন্ত সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলে এই বছরে সেন্টমার্টিনে শেষ যাত্রা ৩১ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসন বলছে-সরকারের আগের নির্দেশনা মতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে ৩১ জানুয়ারি বেড়াতে গিয়ে রাতে দ্বীপে অবস্থানকারি পর্যটকদের ফেরত আনতে জাহাজ যাবে। ওইদিন নতুন করে কোন পর্যটক জাহাজে যাবেন না।

আর রিট আবেদনকারি কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ. ন. ম. হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, আজকে উচ্চ আদালতে রিটের শুনানীর দিন থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারী) ধায্য করা হয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর পরিবেশগত সংকটাপন্ন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক বা নাগরিকদের যাতায়াত ও অবস্থানে বিধিনিষেধ আরোপ করা-সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্ত প্রশ্নে রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এই রুলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল।

গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীন স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করে। যে পরিপত্রে ৫ টি বিষয় উল্লেখ্য রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে সেন্টমার্টিনে নৌ যান চলাচলের বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করে অনুমতি প্রদান করবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে। রত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবেনা, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না। বার বি কিউ পার্টি করা যাবে না। ফেব্রুয়ারি থেকেই বন্ধ থাকবে পর্যটকের দ্বীপ ভ্রমণ।

সিদ্ধান্তের আলোকে ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার পর্যটক ভ্রমণের সীমাবদ্ধ মেনে চলার শর্তে কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেয়েছিল বলে জানিয়েছেন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।

তিনি বলেন, অনুমতি পাওয়া জাহাজ সমুহ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে যাবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে যাবে না। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পুরো মাস বা আরও ১৫ দিন সময় বাড়ানোর নানা দাবি উঠলেও মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার পর্যন্ত কোন অনুমতি পাওয়া যায়নি। তাই বলা যাবে ৩১ জানুয়ারি হচ্ছে এ বছরে সেন্টমার্টিনে শেষ যাত্রা।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি সাড়ে ১০ হাজার মানুষ বসাবস করেন। এখন সময় দ্বীপের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস ছিল সমুদ্রে মাছ আহরণ। কিন্তু গত ২০ বছরে বদলে গেছে এই আয়ের মাধ্যম। এখন দ্বীপের শতভাগ মানুষ পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। নভেম্বর থেকে মার্চ এই ৫ মাসের দ্বীপ ভ্রমণকারী পর্যটক নিয়ে করা আয়ে পুরো বছর জীবিকা পরিচালনা করে দ্বীপের মানুষ। কিন্তু এ বছর ৫ মাস সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্ত মতে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক যেতে পেরেছেন। ফলে দ্বীপবাসির পক্ষে ফেব্রুয়ারি এক মাস বাড়ানোর দাবি রয়েছে। এখনও সময় আছে মন্ত্রণালয় দ্বীপের মানুষের স্বার্থে যেন সময় বাড়ানো হয়।

এদিকে, সেন্টমার্টিন বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রুলের শুনানি হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার। গত ১৫ ডিসেম্বর পরিবেশগত সংকটাপন্ন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক বা নাগরিকদের যাতায়াত ও অবস্থানে বিধিনিষেধ আরোপ করা-সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্ত প্রশ্নে রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ. ন. ম. হেলাল উদ্দিন গত ২১ নভেম্বর রিটটি করেছিলেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন ও মো. উজ্জল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।

বাদি আ. ন. ম. হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, রুলের বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আইনজীবী নিয়ে আদালতে বিষয়টি বিবেচনা করতে শক্তভাবে শুনানিতে অংশ নেয়া হবে। তিনি বিশ্বাস করেন আদালত দ্বীপবাসির সার্বিক কল্যাণে একটি সন্তোষজনক আদেশ প্রদান করবেন।


সম্পর্কিত খবর