সোমবার , ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কক্সবাজার

কক্সবাজারে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ

মুজিব-জসিমের লালিত সন্ত্রাসী মামুন হত্যা মামলায় কারাগারে

সদর উপজেলার খুরুশকুলের শীর্ষ সন্ত্রাসী ২৬ মামলার আসামী মামুন বাহিনীর প্রধান মামুনুর রশিদ মামুনকে গ্রেফতার করার সাহস দেখায়নি কোন পুলিশ কর্মকর্তা। স্বৈরাচার সরকারী দল আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা জসিম উদ্দিনের বলয়ে থাকায় নানা অপরাধ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে পার পেয়ে যান বার বার।

অবশেষে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফয়েজুল আমিন নোমানের আভিযানিক দলের জালে রোববার রাত আটটার দিকে আটকা পড়েন এই সন্ত্রাসী।”

চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামুনের রশিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সোমবার বিকেলে তাকে ৪ আগস্টের ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ করে হত্যা মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

গ্রেফতার মামুনুর রশিদ মামুন (২৭) খুরুশকুলের কাউয়ার পাড়ার মৃত নুরুল আলম বহদ্দারের ছেলে। সে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন বাহিনীর প্রধান।

আগেও অস্ত্রসহ র‍্যাবের হাতে ও ডিবির হাতে আটক হয়েছিল এ শীর্ষ সন্ত্রাসী। কিন্তু জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল।

তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরন, পাহাড় কাটা, নারী নির্যাতন, পুলিশ এসল্ট, ছিনতাই, চাদাবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধে ২৬টি মামলা রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজার সদর উপজেলার খুশকুলের কাউয়ার পাড়া এলাকার মৃত নুরুল আলম বহদ্দারের পুত্র মামুন বাহিনীর প্রধান মো: মামুনুর রশিদ মামুন, মো: কায়সার, মো: পারভেজ, মো: রাসেদ ও মো: সাহেদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজী, মাদক কারবার, পাহাড়কাটা, জবরদখল, পুলিশের উপর হামলা করে হ্যান্ডকাপসহ আসামী ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে ৩৬ টি মামলা রয়েছে।

স্থানিয়রা জানান, পাঁচ সন্ত্রাসী ভাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছেমত এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে আসছে। তাদের রয়েছে বিপুল অস্ত্রের ভান্ডার। সন্ত্রাসী চক্রের প্রধান মামুনের রয়েছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারী চক্র। এ চক্রটি খুরুস্কুলের কাউয়ার পাড়া থেকে চৌফলদন্ডী ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিন ছিনতাই, ডাকাতি করে আসছে। এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয়, নতুন বাড়ীঘর নির্মাণ করলে মামুন বাহিনীকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। অন্যথায় তার নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারী চক্রদের দিয়ে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়।

স্থানিয়রা আরও জানান, তারা ৫ সন্ত্রাসী ভাইদের রয়েছে ৬টি অবৈধ ডাম্পার গাড়ি। এসব ডাম্পার গাড়ী দিয়ে তেতৈয়া এলাকার পাহাড় নিধন করে মাটি বিক্রি ও ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে বেপরোয়া ভাবে। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর বহুবার অভিযান চালিয়ে অর্ধ ডজন মামলা দিয়েও তাদের পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলন বন্ধ করতে পারেনি।

স্থানিয়রা জানান, তাদের রয়েছে ২টি ফিশিং ট্রলার। এ ট্রলার দিয়ে সাগরে মাছ ধরার আড়ালে জলদস্যুতা ও ইয়াবা পাচারেও জড়িত এ সন্ত্রাসী বাহিনী। খুরুশকুলের বঙ্গবন্ধু বাজার থেকে রাস্তারপাড়া পর্যন্ত এলাকার ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছে এ সন্ত্রাসী মামুন বাহিনীর লোকজন। অনেকটা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী মামুন ও তার বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়াভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালালেও এ স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কউ মুখ খোলার সাহস পায়না। এ বাহিনীর অত্যাচারে অনেকে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, আবার অনেকে এলাকা ছেড়ে কক্সবাজার শহরে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে।

প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৭ মে নিজ বাড়ী থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও দা-ছুরাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় দূধর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। এর পুর্বে ২০২১ সালের ৩১ মে রাতে ডিবি পুলিশের অভিযানে আটক হয় দূধর্ষ সন্ত্রাসী মামুন ও তার ভাই কায়সার। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আগ্নেয়াস্ত্রসহ সদর মডেল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় কায়সার। আরেক ভাই পারভেজ ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। মামুনের আরেক ভাই রাশেদ ২০২০ সালে ১০ হাজার ইয়াবা সহ চট্টগ্রামে আটক হয়ে কারাভোগ করে জামিনে বের হয়। একইভাবে বিভিন্ন সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালে খুরুশকুলের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে অসে। কিন্তু তাদের অবৈধ টাকার জোরে জামিনে ফিরে এসে এলাকায় আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠে।

স্থানীয় আ’লীগ-বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘গত আওয়ামী সরকার আমলের ১৫ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান ও কক্সবাজার পৌর ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজাদের সহযোগিতায় এসব অপকর্ম করে বহাল তবিয়তে ছিল সন্ত্রাসী মামুন ও তার বাহিনী। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সাথে মামুনের ছিল দহরম মহরম সম্পর্ক। তারা দুজন মিলে চলতি বছরের শুরুতে চৌফলদন্ডী ব্রিজের দক্ষিন-পুর্ব পাশে বিশাল প্যারাবন কেটে চিংড়ি প্রজেক্ট নির্মান করেছে। ওই প্রজেক্টের বাসায় মামুন বাহিনীর কিশোর গ্যাং ও ছিনতাই চক্র নিয়মিত স্বশস্ত্র অবস্থান করে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে।

স্থানিয় ভুক্তভুগিরা আরও জানান, সম্প্রতি দেশে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে প্রশাসনের যথাযথ নজরদারী না থাকায় দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী মামুন বাহিনী। গত ৫ আগস্ট সদর মডেল থানায় হামলা অগ্নিসংযোগের দিন মামুন বাহিনীর সদস্যরা বিপুল পরিমান মোটরসাইকেল ও মালামাল নতুন ব্রিজ হয়ে নিয়ে যায়। এসব মালামাল মামুনের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। মামুনকে রিমান্ডে নিলে এসব অপকর্মের তথ্য বের হয়ে আসবে। এমতাবস্থায় বর্তমান চলা যৌথ বাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসী মামুন বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার পুর্বক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে খুরুশকুলের আপামর জনসাধারণকে এ বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্ত করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন খুরুশকুলের শান্তিপ্রিয় জনগন।

এ সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় যেসব মামলা রয়েছে: জিআর ২৮০/২০১৯, জিআর ১০৭৯/২০১৭, জিআর ২৯৫/২০১৯, জিআর ৬০৮/২০১৭, জিআর ৮৭৫/২০১৮, জিআর ১৮/২০১৮, জিআর ৯০৮/২০১৭, জিআর ১৩৯/২০২২, জিআর ৬২৮/২০১৯, জিআর ৭৫৪/২০১১, জিআর ২৩/২০১৩, জিআর ২৫/২০১৫, জিআর ২৩/২০১২, জিআর ৫৬৬/২০১৪, জিআর ৯৬৯/২০১৯, সদর থানা মামলা নং-২৯/২০১৯, জিআর ৩১৫/২০২২ (অস্ত্র ও গুলিসহ হাতে গ্রেফতার), জিআর ১৩৭৬/২০১৯ (পরিবেশ সংরক্ষন আইন), জিআর ১৩৭৭/২০১৯ (পরিবেশ সংরক্ষন আইন), জিআর ১৩৭৮/২০১৯ (পরিবেশ সংরক্ষন আইন), জিআর ৪৬২/২০২০ (পরিবেশ সংরক্ষন আইন), জিআর ৭৫৪/২০১১ (নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন), এফআইআর ৭৪ তারিখ ২০.০৮.২০১৪, এফআইআর নাম্বার ২৫/১৫ তারিখ ০৯.০১.২০১৫, এফআইআর ১১/১৯ তারিখ ০২.০৬.২০১৯, এফআইআর নং ২১/৭৪১ (নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন), জিআর ১৯৯/২০১০ (নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন), নন জিআর নং- ১২(১)২০২০, সিআর প্রসেস নং- ৩৭২৪/২১, সিআর নং- ৪২/২০২০, সিআর নং- ৩৬/২০২০, সিআর নং- ২০/২০২০। এবং রামু থানার মামলা: জিআর মামলা নং ৮০৫/২০১৭।


সম্পর্কিত খবর

Flight Centre

Demo Description

This will close in 20 seconds