কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক কাঁচা দুধের তৈরি মহিষের টক দই। সুস্বাদু ও জনপ্রিয়তায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ সুনাম রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সবার পছন্দের তালিকায় অন্যতম একটি খাবার এটি। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে উৎপাদন কম হলেও জেলা জুড়ে এ দইয়ের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘চকরিয়ায় ঐতিহ্যবাহী খাবার মহিষের দই। স্থানীয়ভাবে এটি ‘ইলিশিয়ার দই’ নামে পরিচিত। দই তৈরিতে দুধ আসে পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, ঢেমুশিয়া ও চিরিংগা ইউনিয়নে অন্তত দুই হাজারের বেশি মহিষ থেকে। এসব এলাকার দুই থেকে তিনশ মানুষ মহিষের খামার করেন। কারও বড় খামার, কারও ছোট আকারের। কেউ একটি বা দুই-তিনটি মহিষও পালন করেন। সেসব মহিষের দুধ থেকেই তৈরি হয় ইলিশিয়ার দই। ইলিশিয়ার লাল ব্রিজ থেকে অন্তত চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ৩০-৪০ বছর আগে শুধু ইলিশিয়া এলাকায় মহিষের দই পাওয়া যেতেও। তখন থেকেই এই এলাকার মহিষের দইয়ের সঙ্গে ইলিশিয়ার নাম যুক্ত হয়ে যায়। মাতামুহুরি নদীর তীর ঘেঁষে বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে চরে মহিষসহ গবাদিপশু চরে বেড়ায়।
মুখরোচক এই মহিষের দই চকরিয়াসহ জেলার ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন খাবারের প্রতি সবারই লোভ থাকে। অনেকেই মুখরোচক সেসব খাবার খেতে আসে ইলিশিয়া বাজারে। বিখ্যাত খাবার মহিষের দুধের টক দই। যা এই চকরিয়াকে উপস্থাপন করেছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও।
ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অঞ্চল থেকে দৈনিক হাজার কেজি দই স্থানীয় বাজার হয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা,ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। চকরিয়ায় অনেক অঞ্চলে মহিষের দুধের দই তৈরি হলেও খ্যাতি পেয়েছে ইলিশিয়ার মহিষের দই। এসব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানকার মহিষের কাঁচা দুধ থেকে স্থানীয়ভাবে সবচেয়ে বেশি পছন্দের খাবার টক দই তৈরি হয়। এছাড়া প্রস্তুত হয় মিষ্টি, মাখন, ঘি, রসমালাই, ছানা, সন্দেসসহ নানান মুখরোচক খাবার।
সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ‘চকরিয়ায় ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি মহিষের দই। প্রকৃতির সবুজ প্রান্তরের ওপর নির্ভর করে এখানে শত কোটি টাকার মহিষের বাথান গড়ে উঠেছে নিজস্ব উদ্যোগে। সৃষ্টি হয়েছে পিছিয়ে পড়া নদীবেষ্টিত এ জনপদের হাজার হাজার পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। “
দই বিক্রেতা মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘চকরিয়ায় গরুর দুধের দইয়ের চেয়ে ইলিশিয়ার মহিষা দই বেশ জনপ্রিয়। এই বাজারে ছোট-বড় প্রায় ১৫-২০টি বাজারে দোকানিরা দই বিক্রি করেন। উপজেলাসহ মহিষের দই পুরো জেলায় জনপ্রিয়।
ইলিশিয়া বাজারে কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ‘ইলিশিয়া বাজারে দিনে প্রায় ৪’শ থেকে ৫’শ বেশি দই বিক্রি হয়। মাস শেষে কয়েক লক্ষাধিক টাকার দই বিক্রি করে থাকেন দোকানিরা। এতে বছরে প্রায় কোটি টাকার দই বিক্রি হয় ইলিশিয়া বাজারে। “
কক্সবাজার থেকে দই কিনতে এসেছেন এহসান মিয়া। তারমতে, ‘কক্সবাজারে যে সমস্ত খাবার হোটেল রয়েছে সেখানে এ দইয়ের অনেক চাহিদা। তিনি তার রেস্টুরেন্টের জন্য দই কিনতে এসেছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার ‘ইলিশিয়ার দই কিনতে আসেন।
চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে এসেছেন জসিম উদ্দিন লিমন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীক কাজে চকরিয়া বদরখালীতে আসতে হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে ছেলে-মেয়েদেন জন্য প্রায় সময় নিয়ে যান। নিয়মিত এ দই খাবার কারণে তার ছেলে-মেয়েরা বেশ পছন্দ করেন।
চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানকার অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম উপাদন হচ্ছে ইলিশিয়া মহিষের দই। এ টক দধি গুড়, মিষ্টি অথবা চিনি দিয়ে খাওয়া যায়। দধি সব সামাজিক, পারিবারিক ও ঘরোয়া ভোজে থাকতেই হবে। এ ছাড়া খাবার হজমে কাঁচা দুধের দধি বাড়তি সহায়তা করায় এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
কোথায় পাওয়া যায়:
চকরিয়া- মহেশখালী আঞ্চলিক সড়কের চকরিয়া পৌরশহরে থানা রাস্তার মাথা থেকে আট কিলোমিটার দূরে লাল ব্রিজ এলাকায় যাওয়া যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সেখানে পৌঁছে দেখা মিলবে মহিষের দুধের দইয়ের প্রধান প্রাণকেন্দ্র ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা।
কেমন দামে বিক্রি হয়:
মহিষের দুধের দই সাধারণত মাটির পাত্রে (টালিতে) বসানো হয়। সে অবস্থায় উপরে শুধু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছোট ও বড় দুই ধরনের হাঁড়িতে দই বিক্রি হয় এখানকার দোকানগুলোতে। হাঁড়ির আকারভেদে দইয়ের দামও ভিন্ন। হাঁড়িসহ ১ হাজার ২০০ গ্রামের দই ২৫০ টাকায় আর ২ হাজার ২০০ গ্রামের দই ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। অবশ্য দুধের দামের উপর দইয়ের বাজার ওঠা-নামা করে।