
পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতেই মৌসুম শুরু হয় তরমুজের। রাতে শীতল বাতাসে জুড়ায় শরীর দুপুর নামতেই শুরু হয় গরম। এই গরমে মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় ইফতারে এক টুকরো তরমুজ রাখতে চান সবাই। তাই সুযোগ বুঝে তরমুজের চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় বিক্রেতারা। সাধারণ মানুষের তরমুজ কেনা দুষ্কর হয়ে পড়ছে।
শনিবার পৌর শহরে কাঁচাবাজার ফলের আড়তে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দাম চড়া থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে এই ফল। দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে বাজারে নজরদারি বাড়াতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সাধারণ ক্রেতারা। প্রশাসন যদি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে তাহলে তরমুজসহ বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করছেন।
পৌরশহরে কাঁচা বাজার ফলের আড়তে বেশ কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঝারি সাইজের ১০০ পিস তরমুজ বিক্রি করছেন ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকায়। বড় সাইজের ১০০ পিস তরমুজ বিক্রি করছেন ২০ থেকে ২৩ হাজার টাকায়। ওই হিসাবে মাঝারি সাইজের প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়ে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। বড় সাইজের এক পিস তরমুজের দাম পড়ে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।
খুচরা ফল ব্যবসায়ীরা বলেন, এক চালানে ১ শ থেকে ১৫০ পিস তরমুজ আনা হয়। ১শ পিসের তরমুজের চালানে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় তাই ১৫০, ৩০০ এবং সাড়ে ৩ শ টাকায় প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি করতে হয়। প্রতি চালান তরমুজ বিক্রি করতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ দিন। বিক্রি করতে যদি ৭দিন সময় লাগে তাহলে ১০ থেকে ১৫ পিসের মত তরমুজ নষ্ট হয়। এর মধ্যে যদি বিক্রি করতে আরও সময় লাগে তাহলে ২০ থেকে ২৫ পিস তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় ভেতরে সাদা থাকলে ক্রেতারা তরমুজ ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তরমুজের দাম, পরিবহনের লেভার খরচ, পরিবহন খরচ এবং কর্মচারীর খরচ সব হিসাব করার পর সীমিত লাভেই তরমুজ বিক্রি করছে বলে জানিয়েছে খুচরা বিক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজানের শুরু থেকেই বাজারে আকাশচুম্বী দাম নিয়ে হাজির হয় মৌসুমি ফল তরমুজ। রমজানের প্রথম দিকে এক শ্রেণীর মানুষের ইফতারে যোগ হয় ফলটি। তবে অস্বাভাবিক দামের কারণে সমাজের বড় একটি শ্রেণী ব্যর্থ হয় তরমুজ কিনতে। প্রতি বছর বাজারে তরমুজ আসতেই ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা দেয়।
তরমুজ কিনতে আসা মুজিবুল হক মুজিবের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারে আগাম তরমুজের আমদানি থাকলেও দাম অনেক বেশি। যে তরমুজ ৮০-১০০ টাকায় কেনা যেত সে তরমুজ কিনতে হয় ২৫০-৩০০টাকায়। আর একটু বড় হলে তরমুজের দাম সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০টাকা পর্যন্ত। রোজায় তরমুজ খাওয়ার ইচ্ছে হলেও দাম বেশি হওয়ার কারণে কম আয়ের লোকজন অনেকেই তরমুজ কিনতে পারছেন না।
রিকশাচালক আক্ষেপ করে বলেন, চোখের সামনে তরমুজ ফল দেখে ছেলে-মেয়েদের জন্য কিনতে ইচ্ছা হলেও দাম বেশি, তাই কিনতে পারছি না। যখন দাম কমবে, তখন কিনব। ছোট একটি তরমুজ কিনতে চাইলেও ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লাগবে। সারাদিনে আয় যা হয়, তা দিয়ে চাল-ডাল কিনব, নাকি তরমুজ কিনে খাব।
কাঁচা বাজারের আড়তদাররা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন এই আড়তে লক্ষাধিক তরমুজ আসে। ব্যবসায়ীরা যেমন দামে কিনছেন তার থেকে সামান্য বেশি দামে বিক্রি করছেন। দাম ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে থাকায় তরমুজ বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, তরমুজসহ ইফতারের প্রয়োজনীয় ফলমূল যেন অতিরিক্ত দামে বিক্রি না হয় এবং কোনো সিন্ডিকেট যেন বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চলছে।