বুধবার , ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চকরিয়া

মাতামুহুরি চরে স্ট্রবেরি চাষে কায়সারে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন

কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় নয়ন জুড়ানো সবুজ স্নিগ্ধ বনানী ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য মাতামুহুরি নদী। এ নদী বর্ষার সময়ে ভয়ংকর রুপে ধারণ করে, তেমনি শুকনো মৌসুমে নদীর কিনারে বেশ উঁচু উঁচু চর ভরে ওঠে। এই চরে শোভা পাচ্ছে লাল রঙের স্ট্রবেরি ফলের চাষ। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন মোহাম্মদ কায়সার (৪১) নামে এক কৃষি উদ্দ্যোক্তা।

উপজেলার কাকারা ইউনিয়নে মিনি-বাজার এলাকার কৃষি উদ্দোক্তা মোহাম্মদ কায়সার স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাঁর স্ট্রবেরি চাষ এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও স্ট্রবেরি যাচ্ছে চকরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এ ফলটির চাষ দেখে এখন অনেক কৃষক স্ট্রবেরি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, মাতামুহুরী নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। সেই সবুজের মাঝখানে উঁকি দিচ্ছে সাদা ফুল, সবুজ ফল আর পাকা টকটকে লাল স্ট্রবেরি। মোহাম্মদ কায়সার প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন স্ট্রবেরি চাষ। মাতামুহুরী নদীর চরে ২৫ শতক জমিতে রাজশাহীর এক নার্সারি থেকে উন্নত জাতের ফেস্টিভ্যাল জাতের ৩ হাজার স্ট্রবেরির চারা এনে গত ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বরের মালচিং পদ্ধতিতে এ স্ট্রবেরি চাষ করেন। সবুজ পাতার মধ্যে যেদিকে চোখ গেছে, থোকা থোকায় স্ট্রবেরি ফল। কোনোটা টকটকে লাল, কোনোটার হলুদ রং ধারণ করেছে। কৃষক কায়সার ও তাঁর এক শ্রমিক স্ট্রবেরির পরিচর্যা করছেন, অন্যজন খেত থেকে তুলছেন স্ট্রবেরি ফল।

জানা যায়, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিনি ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। শীতের আবাহাওয়া থাকলে খেত থেকে আরও ২ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করা যাবে। স্ট্রবেরি চাষ করতে মাঠ প্রস্তুত, চারা কেনা ও পরিচর্যা বাবদ তাঁর ১লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। শীতের সময়ে এই বিশেষ প্রকার ফলের চাষ হয়। একাধিক উপকারিতা রয়েছে এই ফলের। তাই চাহিদাও যথেষ্ট। লাল টুকটুকে এই রসালো ফলের প্রেমে পড়েননি এমন মানুষ খুব কম রয়েছে।

মোহাম্মদ কায়সার বলেন, প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছে স্ট্রবেরি চাষ। স্ট্রবেরি ফল বিদেশী হলেও বানিজ্যেকভাবে মাতামুহুরি নদীর চরে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। ২০০৭সালে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ সম্পর্কে ধারণা পাই। তখন স্ট্রবেরি মানুষ চিনত না। তারপর ২০২৪সালে রাজশাহী থেকে ফেস্টিভ্যাল জাতের স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করি। ওই বছর ১৭ নভেম্বর চারা রোপন করে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রথম স্ট্রবেরি ফল উত্তোলন করি।

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত স্ট্রবেরি শীতকালীন বিদেশী ফল। প্রথমে পাওয়ার টিলার দিয়ে মাটি ঝরঝরে করে চাষ দিতে হয়। তারপর সার, গোবরসহ নানা উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এখন খেত থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি পরিমাণ স্ট্রবেরির ফল উত্তোলন করা যায়। আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শীতের আবহাওয়া থাকলে ফল পাওয়া যাবে। চকরিয়াসহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন সুপার শপ ও ফলের দোকানে সরবরাহ করছি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে স্ট্রবেরি চাষ হলেও কায়সারের এখানে বেশি হচ্ছে। ভালো ফলন হওয়ায় ফলের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তাঁর খেত পরিদর্শন করেছি। কৃষকেরা লাভজনকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে আমরা চাষিদের পরামর্শ দেই। কৃষি কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।


সম্পর্কিত খবর