দেশের তৃণমূল পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ ব্যবস্থা। স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো তৃণমূলে বাস্তবায়ন করে ইউনিয়ন পরিষদ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকারের কাঠামোগুলো গুরুত্ব দিয়ে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভার জনপ্রতিনিধিত্ব। বর্তমানে কেবল বহাল রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে বিগত সরকারের দলীয় পদবিধারী চেয়ারম্যানদের কয়েকজন পরিষদে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এসব ইউনিয়নগুলোতে চেয়ারম্যান না থাকায় স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বিশেষ করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, উন্নয়ন প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, সালিশি ব্যবস্থা অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার কয়েক লাখ মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের পরিষদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালানোর জন্য উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করলেও নিয়মিত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের সুফল থেকে অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জনসাধারণের সুবিধার জন্য নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। শীগগির এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ এমনটাই দাবি নবাগত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের।
তিনি বলছেন, যে সব পরিষদে চেয়ারম্যান নেই সেসব পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণের রিপোর্টের ভিত্তিতে বিধি অনুযায়ী প্রশাসক অথবা প্যানেল চেয়ারম্যানদের এ্যাক্টিভ করা হবে।
জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ১২ জন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রশাসকগণ নিজস্ব দায়িত্বের পর সপ্তাহে দুইদিন করে ইউনিয়ন পরিষদ সমূহে জনগণকে সেবা দিয়ে আসছেন।
এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান- সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে মামলার কারণে খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজান সিদ্দিকী পলাতক রয়েছেন। পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করেছে সেই মামলায় আটক হয়েছেন পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল্লাহ। ওই ইউনিয়ন পরিষদে এখনো কোন প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করা হয়নি। তবে প্যানেল চেয়ারম্যানকে বিধি অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হবে। গত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং এ সদর উপজেলা পরিষদে উপস্থিত হননি ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। চেয়ারম্যানের পরিবর্তে একজন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সরকার পতনের পর পরিষদে অনুপস্থিত রয়েছেন চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানও। এছাড়াও সদরের ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন ও নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না বলে জানান ওই ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য।
সদর উপজেলা পরিষদে গত আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে কোন চেয়ারম্যানই উপস্থিত না থাকার কারণে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন।এমতাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদকে সচল করার জন্য প্রশাসনকে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।”