বুধবার , ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পর্যটন ট্রিবিউন

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: পর্যটন উন্নয়নে সম্ভাবনা নাকি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়?

সাগরের জলরাশি ছুঁয়ে ওঠানামা করবে উড়োজাহাজ। এ দৃশ্য কল্পনা করেই শুরু হয়েছিল কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করা। তবে এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পকে কেন্দ্র করে নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০১৩ মেয়াদে উন্নয়নের কাজ শুরু হলেও ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ উদ্বোধন করেন। প্রথম ধাপে ৬,৭৭৫ ফুটের রানওয়ে ৯,০০০ ফুটে সম্প্রসারিত করা হয় এবং বর্তমানে এটি ১০,৭০০ ফুট পর্যন্ত উন্নীত করার কাজ চলছে। সাগরের পাড় ভরাট করে তৈরি করা এই রানওয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ের চেয়েও দীর্ঘ। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা।

প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন

এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম। তার মতে, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য শুধুমাত্র রানওয়ে সম্প্রসারণ যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “শুধু বিচ দেখতে বিদেশি পর্যটকরা আসবে না। বিনোদনের নানা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করলে রানওয়ের এই বিশাল ব্যয় কার্যত অপচয় হবে।”

সংশয় ও সমালোচনা

চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৪০ কিলোমিটার। এই স্বল্প দূরত্বে আন্তর্জাতিক মানের আরেকটি বিমানবন্দর তৈরি কতটা লাভজনক হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কাজী ওয়াহিদুল আলমের মতে, চট্টগ্রামের চেয়ে কক্সবাজারকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে বিনিয়োগ করা সঠিক সিদ্ধান্ত কিনা তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

ইতিবাচক দিক

তবে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া এই প্রকল্পের সমর্থনে বলেন, “যথাযথ উন্নয়ন হলে আন্তর্জাতিক পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারবেন। এতে পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।” তিনি আরও জানান, প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে, এখন লক্ষ্য হলো সেই বিনিয়োগ থেকে সঠিকভাবে রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে লাভজনক করতে হলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বিনোদনমূলক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলে পর্যটনের চাহিদা এবং অবকাঠামো বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিলেও, এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং পরিচালনার অভাবে তা অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।


সম্পর্কিত খবর