আয়কর নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, এখন থেকে ব্যাংকে গিয়ে বা আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে না, অনলাইনেই সব রিটার্ন দাখিল করা যাবে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা জানান।
আয়কর নিয়ে দুটি বিষয় উল্লেখ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের দেওয়া কর-ই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অথচ সরকারের কাছে করের টাকা জমা দিতে পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। এখন থেকে ব্যাংকে লাইন দিয়ে আয়কর জমা দেওয়া বা আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়ার ঝামেলা করতে হবে না। আপনি ঘরে বসেই আয়কর জমা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন, এ ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সকল তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর এবং বেশকিছু বহুজাতিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এখন থেকে এভাবে আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশের বাকি সবাইকে অনলাইন ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান কত বেশি করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দিচ্ছেন, তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জনের জন্য জেলায়-জেলায়, শহরে-শহরে প্রতিযোগিতা হোক। আপনার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবকে শিখিয়ে দিন কীভাবে ঘরে বসে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তরুণ-তরুণীদের অনুরোধ করছি, এ ব্যাপারে করদাতাদের সাহায্য করার জন্য। ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রস্তুতি এখান থেকেই শুরু হতে পারে। পর্যায়ক্রমে সকল প্রকার কর অনলাইনে সংগ্রহ করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আপনাদের সবার জন্য এখন থেকে আয়কর দেওয়ার পথ মসৃণ ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত হোক সেই কামনা করছি।
এদিকে করদাতাবান্ধব, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কর ব্যবস্থাপনা গড়তে এনবিআর বদ্ধপরিকর। এই লক্ষে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ২০২৪-২৫ করবর্ষের অনলাইন রিটার্ন দাখিলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ই-রিটার্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা নিজের রিটার্ন তৈরি, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল অথবা অফলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রিন্ট গ্রহণ, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (নগদ, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমে কর পরিশোধ, রিটার্ন দাখিলের তাৎক্ষণিক প্রমাণ প্রাপ্তি, আয়কর পরিশোধ সনদ ও টিআইএন সনদ প্রাপ্তি, পূর্ববর্তী কর বছরের দাখিল করা ই-রিটার্নের কপি, রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ প্রিন্ট বা ডাউনলোডের সুবিধা পাবেন।
এই সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে টিআইএন ও করদাতার নিজ নামে বায়োমেট্রিক ভেরিফায়েড মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা www.etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে নিজের তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সহজেই রেজিস্ট্রেশন করে ২০২৪-২৫ করবর্ষের ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। আয়কর দাখিলের সবশেষ সময় ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন যেভাবে
ই-রিটার্ন সিস্টেমটি ব্যবহারের সময় আপনার মোবাইল ফোন নম্বর যেটি বায়োমেট্রিকলি ভেরিফায়েড এবং ই-টিন নম্বর প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র যেমন- বেতন সনদপত্র, বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস, জীবন বিমা ইত্যাদি), ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ফ্ল্যাট, জমির তথ্য ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে। না থাকলে আগে তুলে নিতে হবে। আপনার ডকুমেন্টস থেকে নিজস্ব অনেক তথ্য ই-রিটার্নে ইনপুট দিতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমেই ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে https://etaxnbr.gov.bd/ প্রবেশ করতে হবে।
এবার ‘ই-রিটার্ন’ বাটনে ক্লিক করলে একটি নতুন উইন্ডো আসবে। সেখানে জানতে চাওয়া হবে আপনার অ্যাকাউন্ট আছে কি নাই। যদি থাকে তাহলে ‘আই হ্যাভ এন অ্যাকাউন্ট’ বাটনে ক্লিক করতে হবে আর না থাকলে ‘আই ডোন্ট হ্যাভ এন অ্যাকাউন্ট’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন করার পূর্বে আপনার মোবাইল নম্বরটি বায়োমেট্রিক ভেরিফায়েড কি না, সেটা জানতে চাইবে। এ জন্য ‘আই ডোন্ট হ্যাভ এন অ্যাকাউন্ট’ বাটনে ক্লিক করার পর সেই অপশনটা পাবেন।
সেখানের ‘ওকে’ বাটনে ক্লিক করলে ‘সাইন আপ’ পেজ আসবে। এবার আপনার টিন নম্বর, মোবাইল নম্বর ও ক্যাপচা সঠিকভাবে দিয়ে ‘ভেরিফাই’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
আপনার দেওয়া ফোন নম্বরে যে ছয় অক্ষরের ওটিপি কোড যাবে সেটি এবার বসিয়ে একটি নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে দিতে হবে। নতুন পাসওয়ার্ডটি আবার দিয়ে সাবমিট করতে হবে। পাসওয়ার্ড অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার একটি ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
রেজিস্ট্রেশনের সময় অবশ্যই নিজের নামের মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কারও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করার চেষ্টা করলে আপনার টিনটি ব্লক করে দেওয়া হতে পারে। আপনি আর ই-রিটার্ন সিস্টেমে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না।
সাইন ইন
রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে সাইন ইন করতে হবে। সাইন ইন পেজে আপনার টিন নম্বর, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা দিয়ে সাইন ইন করতে হবে। আপনাকে ই-রিটার্নের ড্যাশবোর্ডে নিয়ে যাবে। এখানে ই-টিনের যাবতীয় তথ্য, রিটার্ন সাবমিশন ও ট্যাক্স রেকর্ডের সব তথ্য পাবেন।
রিটার্ন সাবমিশন
ই-রিটার্ন ড্যাশবোর্ডের ‘সাবমিশন’ অপশনের ভেতর দুটি রিটার্ন পেজ পাবেন। ‘রেগুলার ই-রিটার্ন’ ও ‘সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন’।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, বার্ষিক করযোগ্য আয় পাঁচ লাখ টাকার কম হলেই ‘সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন’ আয়কর বিবরণী জমা দিলেই হবে। এ ছাড়া সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার কম হতে হবে, এমন শর্তও রয়েছে। আর বেশি থাকলে ‘রেগুলার ই-রিটার্ন’।
সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন
সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন অপশনে ক্লিক করলে একটি পপ আপ আসবে। সেখানে এক পাতার রিটার্ন পূরণের শর্তাবলিগুলোতে টিক দিতে হবে।
বুঝতে সমস্যা হলে যা করবেন
রিটার্ন প্রস্তুত করার সময়, আপনি (?) চিহ্নে মাউস রেখে সিস্টেম সহায়তা পেতে পারেন। কল সেন্টারে (09643-717171) সরাসরি কল করেও সহায়তা নিতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।