দেশব্যাপী চলমান অভিযানে ৬ হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র ও প্রায় ২ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এসব অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৫শর বেশিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সেনা সদরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মিলিটারি অপারেশন পরিদপ্তরের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান। তিনি জানান, সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৬০০-এর অধিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে বর্তমানে দেশের ২০৮৯ টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে প্রায় সবগুলোই এ মুহুর্তে চালু রয়েছে। এর পাশাপাশি ৭০০-এর অধিক বিভিন্ন ধরণের বিশৃংখল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪১টি, সরকারী সংস্থা/ অফিস সংক্রান্ত ৮৬টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯৮টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের ঘটনা ৩৮৮টি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়মতো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এবং বহু মানুষের জান ও মালের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিদেশী কুটনীতিক ব্যক্তিবর্গ ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কুটনৈতিক এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সেনা টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এছাড়া সেনাবাহিনী অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা, বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করার কাজেও সম্পৃক্ত রয়েছে। যৌথ অভিযানে ৭০০ জনের অধিক মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে প্রত্যন্ত এলাকাসহ সকল দুর্গত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিপদগ্রস্থ মানুষদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এছাড়া দুর্গত এলাকায় মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপনে সহায়তা, মহাসড়কে ট্রাফিক চলমান রাখা, ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ ও সড়ক সংস্কার, এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনেও সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রাখে, যা এখনো চলমান রয়েছে। এসময় বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য দেশের আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণ ও সহমর্মিতা ছিল সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসে দেশের মধ্য-উত্তরাঞ্চলের ৪টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হলে একইভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরী চিকিৎসা সেবা কাজে অংশগ্রহণ করে।
দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবীর অফিসারদের সরকার কর্তৃক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়, যা এখনো চলমান রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা যাতে সুষ্ঠুভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তার জন্য সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষমতার কার্যকরী প্রয়োগের কারণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতি যেমন চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার, শিল্পাঞ্চলের বিশৃঙ্খলা, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে এমূহুর্তে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইন-শৃংখলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং স্থানীয় জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সামনের দিনগুলোতে এই সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে কর্মধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী অঙ্গীকারাবদ্ধ।