খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা সদরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বিকেল ৩টা থেকে খাগড়াছড়ি সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ জারি থাকবে।’
নিহত আবুল হাসনাত সোহেল (৪৮) খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সিভিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইন্সট্রাক্টর।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ওই ছাত্রী আদালতে গিয়ে পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে বলে সাক্ষ্য দিলে অভিযুক্ত শিক্ষক খালাস পান এবং কর্মস্থলে যোগ দেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে প্রত্যাহারের দাবি করে আসছিল। আজ সকালে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে তাকে অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এদিকে শিক্ষককে হত্যার প্রতিবাদে পাহাড়ি ও বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয় কলেজের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র। এতে আহত হয় অন্তত ২০ জন। পরে ঘটনার রেশ পুরো জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও রিপল বাপ্পী চাকমা জানান, দুপুর ১টার দিকে ওই শিক্ষককে হাসপাতালে আনা হয়। তবে পরীক্ষা করে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়ি সদরে চোর সন্দেহে মো. মামুন (৩৪) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। পরিস্থিতি রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘাতে। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে নিহত হয় আরও পাঁচজন। দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে দেড় শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।”