রামুতে টাকার বিনিময়ে জীবিত ব্যাক্তিকে মৃত দেখিয়ে মৃত্যু সনদপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাবুল চৌধুরী ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ এমরানুল হক ইমরান বিরুদ্ধে।
রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ক্যাজর বিল এলাকার রাবেয়া বসরী নামের এক মহিলা রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে দিতে জীবিত পিতা মেহের আলীকে মৃত বানিয়ে মৃত্যুসনদ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই ২০২২ সালে জীবিত পিতা মেহের আলীর নামে মৃত্যু সনদের জন্য গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ বরাবর আবেদন করেন রাবেয়া বসরী। আবেদনটি গ্রহণ করে মোটা অংকের টাকার নিয়ে কোন ধরণের তদন্ত না করে মৃত্যু সনদের পৃষ্টার ক্রমিক ৫৮১ নং ও ৩নং বইয়ের মৃত্যু সনদ বইয়ের ৩০৩ নং পৃষ্ঠায় ৩০৬ নং ক্রমিক মূলে জীবিত মেহের আলীকে ২০০০ সালে মৃত দেখিয়ে মৃত্যুসনদ প্রদান করেন গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাবুল চৌধুরী ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ এমরানুল হক ইমরান।
আর এই মৃত্যুসনদ ব্যবহার করে মোঃ শফিক নামের মিয়ানমারের এক নাগরিককে জন্ম নিবন্ধন তৈরী করে দিয়েছেন রাবেয়া বসরী। জন্ম নিবন্ধনে মোঃ শফিকের মাতার নামের জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে রাবেয়া বসরীর নাম। চেয়ারম্যানের, ইউপি সদস্য ও রাবেয়া বসরীর এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে জড়িততের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় শাস্তির দাবী করেছেন।
এই ব্যাপারে আইনজীবি শিপ্ত বড়ুয়া বলেন, “চেয়ারম্যানের দায়িত্ব যে কত বড় সেটা হয়তো তিনি বুঝেন না। জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে সনদ দেওয়া গুরুতর অপরাধ। তবে এখানে একটা বিষয় জানা জরুরী তিনি জেনে এটা করেছেন কিনা? জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তিনি অবহেলার জন্যও দায়ী হতে পারেন।”
বাংলাদেশের জন্মসনদ বানানো মোঃ শফিক বলেন আমি নিজে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২০২১ সালে এসেছি। আমি রাবেয়া বসরীকে বোন ডেকে আশ্রয় নিয়ছিলাম। ওনর এন আইডি কার্ড নিয়ে কক্সবাজারে আমার একজন বন্ধ বদি আলম এর কাছে দিলে তিনি আমাকে জন্মসনদটি বানিয়ে দে।
প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া রাবেয়া বসরী বলেন, জন্ম নিবন্ধন করতে পিতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি দিতে হয়। আমার পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র নেই। তাই বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছ থেকে পিতার মৃত্যু সনদ নিয়ে পিতাকে মৃত দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন তৈরী করেছি।
ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া মৃত্যুর সনদপত্রটি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে সোমবার সকালের ভুক্তভোগী বৃদ্ধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত সনদ নেওয়া মৃত ব্যাক্তি মেহের আলী প্রতিবেদককে জানান, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। কীভাবে হলো জানতে চাইলে সেই বিষয়ে নিয়ে কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে যান। সেই এলাকায় মেম্বার আর চেয়ারম্যানের কথা বলে ব্যবস্থা নিবে বলে জানান।
অভিযোগের বিষয়ে ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ এমরানুল হক ইমরান বলেন, নতুন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর রাবেয়া বসরী নামের এক মহিলাকে মেহের আলী নামের এক ব্যাক্তির মৃত্যু সনদ দিয়েছিলাম। পরে খোজ নিয়ে মেহের আলী জীবিত জানতে পেরে মৃত্যুসনদটি নিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইউপি সদস্য।
অভিযোগের বিষয়ে গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাবুল চৌধুরী জানান, ‘আমার কাছে অভিযোগটি আসছে। মৃত্যু সনদটি স্থগিত করা হচ্ছে। বিষয়টি রিপোর্ট করা হচ্ছে বলে ফোন কেটে দেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘জীবিত ব্যাক্তিকে মৃত দেখিয়ে মৃত্যুসনদ দেওয়া আইনত দণ্ডনীয়। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। “