বুধবার , ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রামু

সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচার চক্রের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

Oplus_131072

কক্সবাজারের টেকনাফে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে ‘গোপন আস্তানায়’ জিন্মি থাকা এক যুবকের দালাল চক্রের সদস্যদের নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনায় রামু উপজেলার একই এলাকার মালয়েশিয়াগামী ১১ যুবকের মধ্যে ৯ জন ফিরে আসলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে একজন।

মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ডেইলপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনার পর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান, নিহতের স্ত্রী ছফুরা খাতুন।

নিহত রহমত উল্লাহ (৩৫) রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়ার মৃত মোহাম্মদ কাশিমের ছেলে।

ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে একই এলাকার নাজির হোসেনের ছেলে নবী আলম (২০)।

তবে ঘটনার ব্যাপারে টেকনাফ থানার পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা কেউ অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

নিহতের স্ত্রী ছফুরা খাতুন বলেন, শুক্রবার ( ১৭ জানুয়ারি ) দুপুরে   রহমত উল্লাহসহ রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়ার ১১ জন বাসিন্দা স্থানীয় জনৈক জাহাঙ্গীর আলমের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়ার যেতে ঘর থেকে বের হন। ঘর থেকে রওনা দেওয়ার সময় স্বামী তার হাতে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল ফোন নম্বর দেন। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যার দিকে ওই ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সংযোগ পাননি। সেই থেকে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।

“ পরে আমার স্বামীর সাথে মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেওয়া অন্যদের স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন তারা টেকনাফের সমুদ্র উপকূলের পাহাড়ে দালাল চক্রের সদস্যদের হেফাজতে রয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে তাদের সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে তুলে দেওয়া হবে। তবে বাড়ী থেকে রওনা দেওয়ার পর থেকে তার স্বামীর সঙ্গে কোন ধরণের যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। “

ভূক্তভোগী এ নারী বলেন,  কিন্তু মঙ্গলবার ( ২১ জানুয়ারি ) সকালে তাদের এলাকা থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেওয়া একজনের স্বজন সাইফুল ইসলামকে জনৈক ব্যক্তি ফোনে জানায় দালাল চক্রের হাতে জিন্মি কয়েকজনকে টেকনাফের পাহাড়ে জিন্মি করে নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদেরকে নির্যাতনের পর পাহাড়ী এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

“ ওই খবরের ভিত্তিতে সাইফুল ইসলাম টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ডেইলপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে আহত অবস্থায় রহমত উল্লাহ’র সন্ধান পেলেও অন্যদের খোঁজ মেলেনি। “

ছফুরা খাতুন জানান, পরে জানতে পারেন তাদের এলাকার মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশ রওনা দেওয়া ১১ জনের মধ্যে ৯ জন দালালদের গোপন আস্তানা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তার স্বামী রহমত উল্লাহকে আহত অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

ঘটনায় নবী আলম নামের এক যুবক এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান, ভূক্তভোগী এ নারী।

ছফুরা খাতুন জানান, তার স্বামীসহ অন্যরা দালাল চক্রের গোপন আস্তানা থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এতে আহত হয়ে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।

তবে ঘটনার ব্যাপারে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন অবগত নন জানিয়ে বলেন, বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

এ নিয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াছ খান বলেন, সকালে টেকনাফ থেকে আহত এক ব্যক্তিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। 

কিন্তু কারা, কি কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি জানিয়ে তিনি জানান, নিহতের শরীরের মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যু কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে বলে জানান ইলিয়াছ খান।


সম্পর্কিত খবর