রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয়

হাসনাত আব্দুল্লাহর মুঠোফোন কি আদৌ খুইয়েছেন!

কক্সবাজারে একটি হোটেলে বিশ্রাম নেয়ার সময় মোবাইল ফোন খুইয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এমন অভিযোগ করে নিজেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানান। তবে, তিনি এবিষয়ে কোন ধরণের অভিযোগ বা জিডি না করেই গেল শুক্রবার ভোরে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। 

যদি ফোন খোয়া যায় তাহলে তা উদ্ধার না করে চলে গেলেন কেনো হাসনাত..? মোবাইল যদি চুরি হয়েই থাকে তাহলে তিনি জিডি কেনো করলেন না..? নাকি নিজের সফর সঙ্গীদের কেউ এই ফোন সরিয়েছেন সেটা বুঝতে পেরেই নিজেই সটকে গেছেন..?। এমন অনেক এখন জনমনে। 

আর সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজার সরেজমিন চেষ্টা করেছে নিউজটাই। হোটেল ও পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র বলছে- ১১ সেপ্টেম্বর রা সাড়ে ১০ টার দিকে ৪০ জনের বহর নিয়ে অন্যতম সমন্বয় হাসনাত আব্দুল্লাহ কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনের ‘সিলিকন শাকিরা বে রিসোর্টে’ যান। সেখানে পূর্বে থেকে সাকিব নামে চট্টগ্রামের সমন্বয়ক পরিচয়ধারী ৭টি কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন। সেখানের ৩০১ নাম্বার কক্ষে অবস্থান নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি ছাড়াও কক্ষে ছিলেন তার সফর সঙ্গী ওসামা ইসলামসহ আরও ৪ জন। তবে বাকিদের নাম জানা যায়নি। বহরের অন্যান্য বাকি ৬ রুমে রাত্রী যাপন করেন। 

৩০১ নং কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামরায় দেখা যায়- পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল ৬ টা ১২ মিনিটের দিকে কক্ষ থেকে বের হন ওসামা ইসলাম। তিনি বের হবার ঠিক ৪৭ সেকেন্ড পর ওই সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কক্ষটি থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার দূরত্ব মাত্র দুই ফিটের। এরপর সকাল ১১ টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ এসে হোটেলের ম্যানেজার মোহাম্মদ ফয়সালকে জানান তার ফোন খুঁজে পাচ্ছেন না। তারপর তিনি পুলিশে খবর দেন।

পরে পুলিশ এসে সিসিটিভির সংযোগ বিচ্ছিন্নের তথ্য জানতে পারেন। সেটা জানার পর হাসনাত আর ফোন তল্লাশী বা হোটেল কর্তৃপক্ষের প্রতি চাপ প্রয়োগ করেছেন তার জন্য ক্ষমা চান। মোবাইলটি উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকে জিডির পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি তা করেননি। ফোন ফেরত পেয়েছেন বা তার সন্ধানে কোনকিছুই প্রশাসনকে জানাননি। 

সিলিকন শাকিরা বে রিসোর্টে’র দুই ম্যানেজার মোহাম্মত ফয়সাল ও মাহফুজুর রহমান হেলাল নিউজটাইমকে বলেন- সিসিটিভি ক্যামরায় ধরাপড়ে  তার কক্ষে থাকা ওসামা ইসলাম বের হচ্ছেন। তিনি বের হবার ঠিক ৪৭ সেকেন্ডের মাথায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। দুপুরের দিকে পুলিশসহ গিয়ে দেখি ওই ক্যামরার কেবল খুলে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও হাসনাত দুজনই আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এতো সকালে আমাদের কোন ছেলে সেখানে উঠেনি দেখার পর পুলিশ তার কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করেন। যেখানে ওসামা ইসলামের বের হওয়ার তথ্যটি ধরাপড়ে। পরে হাসনাত ও পুলিশ কর্মকর্তাদের আমাদের আরকিছু না জানিয়ে চলে যান। 

হোটেলটির সিসিটিভি দেখবাল করেন জুনাইদ হাসান নিউজটাইমকে বলেন- কক্ষ থেকে ওসামার বের হওয়া আর সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা বলে দেয় হাসনাতের ফোন খোয়া গেছে কিভাবে। হয়তো সেটা বুঝতে পেরেই তিনি আর অভিযোগ বা জিডি করেননি। 

কক্ষে থাকা একজনের বরাত দিয়ে জুনাইদ আরও বলেন- যে টেবিলে ফোন রাখা ছিল সে টেবিলে আরও তিনটি ফোন ছিল। বেশকিছু নগদ অর্থও ছিল। কিন্তু সবকিছি আছে হাসনাতের ফোনটি নেয়। কোন এক উদ্দেশ্যেই হয়তো এটি তাদের কেউ সরিয়েছে। 

তার জিডি না করার বিষযটি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন- বৃহস্পতিবার মুঠোফোন খোয়া যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ মুঠোফোনটি উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। কিন্তু তিনি (হাসনাত আব্দুল্লাহ) এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে জানালেও তিনি কোন ধরণের জিডি বা অভিযোগ করেননি। তাই পুলিশ ফোনটি উদ্ধারে তৎপরতা থামিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার মোবাইল হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, তার ফোনটি স্যামস্যাং এস-২৪ আলট্রা মডেলের। হোটেল কক্ষে সকালে ১১টার দিকে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে ফোন না পেয়ে জেলা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। 

জিডি বা অভিযোগ না করার বিষয়ে জানতে তার মোবাইল নাম্বারে একাধিক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেখানে সংযোগ মিলেনী। তার সফর সঙ্গী হিসেবে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজারের এক সমন্বয়ক জানান- রাতভর চেষ্টার পরও উদ্ধার করতে না পারায় হাসনাত আব্দুল্লাহ শুক্রবার ভোরে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। তার এক জায়গায় আলোচনা সভা রয়েছে। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখবেন।

মোবাইল হারিয়ে ফেলার বিষয়ে কেন জিডি বা অভিযোগ দেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন- জিডি করার কথা ছিল। কেন করেননি তা আমাদেরকে স্পষ্ট করেনি। 

পেকুয়া-চকরিয়ায় আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের সিলিকন শাকিরা বে রিসোর্টে’ উঠেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন হাসনাত। সেখান থেকে তার ফোনটি খুয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 


সম্পর্কিত খবর

Flight Centre

Demo Description

This will close in 20 seconds