বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

টেকনাফ

গ্রাম পুলিশের অঢেল সম্পদের পেছনে ‘ক্রসফায়ার বাণিজ্য’

এক সময়ে বাজারের ছোট্ট একটি মাইকের দোকান নিয়ে মাইকিং করতেন আমিনুল হক। এক চালা ঘরে পরিবারের লোকজন নিয়ে থাকতেন ঠাসাঠাসি করে।কিন্তু মাইকের দোকান নিয়ে ও চলছিল না তার পরিবার।তাই যুক্ত হন পুলিশের সোর্স হিসেবে।

এভাবেই চেনা হয় চোরাচালানের অলিগলি এবং গডফাদারদের। কাজ শুরু করেন ওসি প্রদীপের বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবে। এর সূত্র ধরে টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নে মাদক কারবারিদের তালিকা তৈরি করে।কোটি টাকার চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব দেন ওসি প্রদীপ তাকে। তখন আমূল বদলে গেছেন তিনি। টেকনাফের হোয়াইক্যং হয়েছে তার কোটি টাকার বাড়ি। কোটি কোটি টাকার জায়গা কিনে রেখেছেন। হঠাৎ শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া আমিনের পেছনের গল্প প্রদীপ ক্রসফায়ার ব্যবসা।

প্রদীপের রাজত্বের ছোঁয়ায় রাতারাতি ধনী বনে যাওয়া এ ব্যক্তির নাম আমিনুল হক প্রকাশ মাইক আমিন।তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবার যে মামলায় আসামি রয়েছে প্রদীপসহ কয়েকজন পুলিশ অফিসার। অনেক নিরীহ মানুষকে প্রদীপের ভয় দেখিয়ে যে টাক গুলো আত্মসাত করেছেন।সেগুলোর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

টেকনাফ কক্সবাজার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দফাদার আমিনের বিরুদ্ধে প্রদীপের রাজত্বের যোগে ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে প্রবাসী এবং মাদক কারবারিদের কাছ থেকে ঘুস গ্রহণ, চাঁদাবাজি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধাগ্রহণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।

স্থানীয়দের দাবি, আমিনুল হক ও প্রদীপ নিজে মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। ক্রসফায়ার দেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন আমিন। অভিযোগ প্রদীপের যোগে রাতের অন্ধকারে তল্লাশির নামে নিরীহ মানুষের ঘরে লুটপাট, নিরীহ ব্যক্তিদের আটক করে টাকা আদায় করতেন তিনি। ইয়াবা সিন্ডিকেটকে অর্থের বিনিময়ে নির্বিঘ্নে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দিয়েছিল তাকে ওসি প্রদীপ।এছাড়া আমিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে ঘরছাড়া করা, টাকা না পেলে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছিল তার দায়িত্ব।সে টাকায় এখন আলিশান জীবন যাপন করছে মোঃ আমিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ে দুইটি ফ্ল্যাট তিনি থাকেন, যার মূল্য দুই কোটি টাকা। বিভিন্ন জায়গায় দুই কানি তার নামে জমি রয়েছে।জানা যায়,২০১৯ সালে চৌকিদার পদে যোগদান করেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আমিনুল হক। ২০২০ তিনি প্রদীপের হয়ে মাঠে ময়দানে কাজ শুরু করেন।এরপর থেকে তিনি ফুলেফেঁপে উঠতে থাকেন।

এরপর ক্রসফায়ার ব্যবসার টাকায় রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হতে শুরু করে নিজের ও বউয়ের পরিবার। নুর হাফেজ বলেন, খুব নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার তাঁদের। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে ও ৩৮ শতক জমি কিনেছেন। তাঁর কৃষিজমি রয়েছে ৫০ বিঘার মতো। শুধু গ্রামের বাড়িতে নয়, কক্সবাজার শহরেও তাঁর তিনতলা বাড়ি আছে। আর এ সবই করেছেন প্রদীপের ডাকাতির মতো নানা ধরনের অপরাধ করে।

ভুক্তভোগী মোঃ ইসমাইল জানান, আমাদের এলাকায় ২য় প্রদীপ ছিল মোঃ আমিন। প্রদীপের সময় আমাদের এলাকায় একধরনের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। প্রদীপের নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি টাকার আত্মসাত করে এ আমিন। আমার ভাইকে ও মাদকের তকমা দিয়ে ২০ লাখ নিয়ে ক্রসফায়ার দেন আমিন ও প্রদীপ। আলোচিত মেজর সিনহা ঘটনার আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি।

আরেক ভুক্তভোগী পরিবার বলেন, ফাঁসির আসামি সাবেক ওসি প্রদীপ যখন ক্রসফায়ার দেওয়া শুরু করেন তার
ঘুষ বার্ণিজ্য করতে নেমে যায় আমিনুল হক প্রকাশ মাইক আমিন। প্রদীপের অবৈধ লেনদেন করতেন তিনি সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসহায় অসংখ্য মানুষকে হয়রানির শিকার করে।আমাকে মামলায় ঢুকায় দিবে বলে ৫ লক্ষ নেয় এ প্রদীপের সহযোগী আমিন।

স্থানীয় রাশেল জানান, পাঁচবার বছর আগেও দেখেছি আমিন স্থানীয় বালুয়া বাজারে একটি মাইক ভাড়া দেওয়া ছোট্ট দোকান করতেন। হঠাৎ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ায় মাটিতে যেন পা পড়েনা আমিনের। তার চলাফেরা দেখে রীতিমতো হতভম্ভ তার স্বজন ও স্থানীয়রা। আমার মত অন্যদেরও প্রশ্ন- কী করে এত দ্রুত কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন পুলিসের সোর্স আমিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোঃ আমিন বলেন, আমি প্রদীপের হুকুম পালন করতাম। আমি যে টাকা নিতাম সে টাকা প্রদীপকে বুঝিয়ে দিতাম। সেখান থেকে আমি কিছু পেতাম।বাকি গুলো মিথ্যা বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, একজন সাধারণ ইউনিয়নের দফাদার হয়ে বিলাস বহুল মার্কেটে রয়েছে তার নামে।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, প্রদীপের সহযোগী এবং ক্রসফায়ারে অন্যতম মাস্টারমাইন্ড।এসব অভিযোগ থাকার পর তিনি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। আমার দাবি তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি)মোহাম্মদ সালা উদ্দিন বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। “


সম্পর্কিত খবর

Flight Centre

Demo Description

This will close in 20 seconds