বুধবার , ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পর্যটন ট্রিবিউন

‘ভ্যাট ফাঁকি দিতে আড়ালে পর্যটকের হিসেব’

দুর্গাপূজার বন্ধসহ টানা চারদিনের সরকারী ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের স্রোত এখন দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের দিকে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলে ইতোমধ্যে ১০-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০-৯৮ শতাংশ হোটেল রুম বুকিং হয়েছে। আর ১৪-১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৮০-৮৫ শতাংশ রুম আগাম বুকড। তবে পর্যটক টানতে প্রায় প্রতিটি হোটেল ৪০-৪৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়েছেন রুম ভাড়ায়। রোববারের মধ্যে শতভাগ কক্ষ বুকিং হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে, কত সংখ্যাক পর্যটক কক্সবাজার এসেছে তার তথ্য গোপন করে অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও কিছু অসাধু কর্মকর্তা ম্যানেজ করে রাজস্ব ফাঁকি দেয় কয়েক শ হোটেল-মোটেল।

শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুরে কক্সবাজার শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক সপরিবারে দল বেঁধে অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউবা নেমেছেন সাগরের নোনা পানিতে গোসল করতে।

ঢাকার মালিবাগ থেকে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন নতুন দম্পতি শাহ জালাল ও শারফিন।

শাহ জালাল বলেন, কক্সবাজারে বার বার আসলেও এবার জীবন সঙ্গীনিকে নিয়ে আসলাম। হোটেলে রুম পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। মানুষের ভিড়ে সমুদ্রসৈকতকে দেখতে মনে হচ্ছে বড় সমাবেশস্থল। মানুষের এই মিলনমেলা দেখতেও অন্যরকম অনুভূতি।

কুমিল্লার বেসরকারি কর্মকর্তা ফাহিম সরকার বলন, রুম পাইনি বলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসতে পারিনি। মাত্র দুইটা রুম পেলাম। তাই আমরা দুই ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা এলাম। ছুটির দিনে কক্সবাজারে অনেক মজা লাগছে। মা-বাবা ও ভাই-বোনরা থাকলে আরো ভালো লাগতো।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সরওয়ার কামাল বলেন, পর্যটন মৌসুমে খাবার-দাবার কিংবা হোটেলের দাম আমাদের কাছে একটু বেশি মনে হলেও অতিরিক্ত নিচ্ছে না বলে জানায় তারা। অতিরিক্ত না নিলে ভালো। কারণ সবাই নির্দিষ্ট একটা বাজেট নিয়ে ঘুরতে আসে।

কক্সবাজার শহর সংলগ্ন সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ শহরের বাইরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ছিল হাজার হাজার মানুষের ভীড়। পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, গত ৪ মাসের মধ্যে এ সপ্তাহেই সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকে সমাগম হচ্ছে কক্সবাজারে।

হোটেল মালিকরা জানান, গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কার্ফিউ জারির কারণে ২ মাস ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে মন্দাকাল চলে। এরপর গত মাসের শেষার্ধ থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে থাকে।

সাগরপাড়ের তারকাহোটেল কক্সটুডে’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, আগামীকাল রোববারের মধ্যে শতভাগ কক্ষ বুকিং হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একই আশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।

তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নামবে।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘ ২ মাস দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাকাল গেছে। তবে গত মাসের শেষার্ধ থেকে ছুটির দিনে হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনায় আবারও স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজার।

এদিকে দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজার ঢাকা-রুটে ৭টি বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে। ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চারদিন এই বিশেষ ট্রেনগুলো চলবে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রথম বিশেষ ট্রেনটি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর ১১ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রেনগুলো ছেড়ে যাবে। ট্রেনগুলো রাত ১০টায় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এই রুটে নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেনের পাশাপাশি এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করা হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বিশেষ ট্রেনের আসন সংখ্যা থাকবে ৫১৮টি, আর কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ট্রেনের আসন সংখ্যা থাকবে ৬৩৪টি। পর্যটকদের জন্য এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিসটি দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজারে ভ্রমণের আনন্দকে আরও নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

এ রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। এরমধ্যে কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে যাত্রার সময় আসন সংখ্যা ৭৯৭ এবং ফিরতি পথে আসন ৭৩৭টি। পর্যটক এক্সপ্রেস এর ধারণ ক্ষমতা ৭৮০ জন।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত: শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে পিক সিজন এবং বর্ষাকালীন সময়কে অফসিজন বা মন্দা মৌসুম হিসাবে ধরা হয়। এরপরও বর্ষাকালে সরকারী ছুটির দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার এবং অফিস খোলার দিনে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। তবে প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল-মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।

সমুদ্রের শহর কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সমুদ্রসৈকতসহ জেলার প্রতিটি স্পটে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি রেখেছে প্রশাসন।

পর্যটকরা নির্বিঘ্নে সমুদ্রসৈকত ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি পাহাড়-ঝরনা, প্রাকৃতিক গুহার দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, ইনানী ও পাটোয়ারটেক পাথুরে সৈকত, শামলাপুর সৈকত, টেকনাফ সৈকত, জাহাজপুরা গর্জন বাগান, মাথিন কূপ, কুদুমগুহা, রামুর বৌদ্ধপল্লি, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির ও চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ভ্রমণ করতে পারবেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থাকে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে নিরাপত্তা জোরদার করবো। এবারের ছুটিতে আমাদের অতিরিক্ত পেট্রোলিং থাকবে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল বিষয় যেমন ড্রোন, সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। এছাড়া প্রতিটি স্পটে আমাদের সাদা পোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশের লোকজন থাকবে।’


সম্পর্কিত খবর