বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পর্যটন ট্রিবিউন

মানছে না নির্দেশনা

সৈকতে প্রাণ যাচ্ছে অতিউৎসাহী পর্যটকের

বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে গত ১০ মাসে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৫৬ জনকে। সৈকত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা না মেনে অতি উৎসাহী হয়ে সমুদ্রে নামাকে এসব প্রাণহানীর প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া সুরক্ষা পোশাক ছাড়া দ্রুতগতির জেটস্কিতে চড়া, চিহ্নিত বিপজ্জনক জায়গায় সংকেত না মেনে গোসলে নামা এবং সাতার না জেনে টিউবে ভেসে গভীরে চলে যাওয়ার কারণেও অনেকে মারা যাচ্ছেন। বিচকর্মী, সি সেইফ লাইফগার্ড ও পুলিশ বলছে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে। প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর কক্সবাজার সৈকতে মামুন নামে এক পর্যটক জেটস্কি থেকে পড়ে মারা যান। তিনি কোনো সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই দ্রুতগতির জেটস্কি চালাচ্ছিলেন। পাশাপাশি মোবাইলে সেলফি তুলছিলেন। একদিন আগে, ২০ অক্টোবর টিউব নিয়ে গোসলে নেমে কক্সবাজারের কলাতলী পয়েন্টে সাগরে ডুবে উখিয়ার বাসিন্দা মো. সায়মন (২০) মারা যান। ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে এসে নিখোঁজ হয় কিশোর প্রবাল দে প্রান্ত। আট ঘণ্টা পর কবিতা চত্বরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করে ‘সি সেইফ লাইফগার্ড’। তাদের নেতৃত্ব দেওয়া সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত মনে করেন, ‘লাইফগার্ডদের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতেই হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটে। ব্যতিক্রম ঘটনা নেই সেটা বলব না। তবে সেগুলোর তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

লাইফগার্ডদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তিনটি পয়েন্টে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সি সেইফ লাইফগার্ড সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। দুই শিফটে কাজ করেন ২৭ জন। এ সময় তারা পর্যটক বা সাগরে গোসলে নামা লোকজনের ওপর নজর রাখেন। বিপদজনক স্থানে লাল পতাকা উত্তোলন করেন এবং সাগরে জোয়ার ভাঁটার ওপর সাগরের অবস্থা সম্পর্কে পর্যটকদের দিকনির্দেশনা দেন।

লাবণি পয়েন্টে দায়িত্বরত লাইফগার্ড আব্দুল শুক্কুর জানান, বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সাগরে গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়। পরে শীতের মৌসুমে সেগুলো ভরাট হয়ে যায়। এ সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নির্দিষ্ট এরিয়ায় গোসলে নামা এবং লাইফগার্ডের দিকনির্দেশনা মেনে চলা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। যারা এসব মানেন না তারাই দুর্ঘটনার শিকার হন।

একজন লাইফগার্ড কর্মী জানান, ভাসমান টিউব একটি মৃত্যুফাঁদ। যারা টিউব নিয়ে সাগরে নামেন তাদের অনেকেই সাঁতার জানেন না। তখন তাঁরা টিউবের ওপর ভরসা করে ভাসতে ভাসতে দূরে চলে যান। এ সময় স্রোতের টান ও ঢেউয়ের তোড়ে টিউব ছুঁটে গেলে পানিতে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয়। সমুদ্রে টিউব নিষিদ্ধ করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া অনেক জেটস্কি চালক ট্রেনিংপ্রাপ্ত নয়। অনেক চালক ভালোভাবে সাঁতারও জানেন না।

জানা গেছে, পর্যটকরা অনেক সময় তাদের নির্দেশনা মানতে চান না। বিপদসীমা অতিক্রম করে সমুদ্রে গোসলে নামেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে কক্সবাজারে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়। এ সময় সৈকতে গোসলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পর্যটকরা তা মানছিলেন না। নিষেধাজ্ঞার সময় কেন সৈকতে নেমেছেন এমন প্রশ্নে সবাই দিচ্ছিলেন খোঁড়া যুক্তি।

ঢাকা থেকে আসা সৌরভ পাটোয়ারী নামে এক পর্যটক বলেন, ‘দুদিন আগে কক্সবাজারে এসেছি। ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনলাম। কিন্তু সৈকতে এসে সেরকম কোনো পরিস্থিতি দেখতে পেলাম না। এখানে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলো। যতটুকু পারছি নিরাপদে থেকে সৈকতে গোসল করছি।’

সৈকতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়া জামান বলেন, ‘তিন নম্বর সংকেত দেখছি অনলাইনে। সেদিকে খেয়াল রেখে সৈকতে এসেছি। কিন্তু অনেকে এটি মানছে না।’ কথা হয় মিতালী রায় নামে সিলেট থেকে আসা এক পর্যটকের সঙ্গে। বিপদ সংকেতের মধ্যে কেন পানিতে নেমেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,‘সতর্কতার মাইকিং শুনেছি। তাই খুব বেশি গভীরে যাচ্ছি না।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন জানান, সৈকতের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচকর্মী এবং লাইফগার্ড সবাই মিলিতভাবে কাজ করছে। তবে পর্যটকদের আরো সচেতন হওয়া দরকার। অনেক সময় বিপদসীমা থেকে পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তারা বিষয়টিকে স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন। “


সম্পর্কিত খবর

Flight Centre

Demo Description

This will close in 20 seconds