
দিন যত গড়াচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেনো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিরুৎসাহিত করণের অভিযোগ উঠে এলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরণের ভ্রুক্ষেপ না থাকায় এনজিওজীবি কতিপয় দুস্কৃতিকারীরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়- স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং নিয়োগ পরীক্ষার নামে প্রহসন করে স্থানীয়দের ছাটাই করা হচ্ছে এবং নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে সেসব পদে নিজেদের পরিচিত লোকজন এনে ভর্তি করে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বড় বড় এনজিও কর্তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি এসবের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য আসা বিশাল অংকের ফান্ড লুটপাট করে নিচ্ছে অভিযুক্ত এনজিও চক্র।
অভিযোগ উঠেছে- উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করার অজুহাতে সুইডেন ভিত্তিক আইএনজিও ‘হ্যাকস/ইপার’এর নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পলাতক স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের ৩ চিহ্নিত দোসর। গেলো বছরের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এই এনজিওতে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং নিয়োগ পরীক্ষার নামে প্রহসন করে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করে আসছে এই চক্রটি। পটপরিবর্তন হলেও খোলস পাল্টে এসব স্বৈরাচারের দোসর নতুন ভাবে অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করে দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান- প্রতিষ্ঠানটির প্রজেক্ট অফিসার আমরান হোছাইন পলাতক আওয়ামীলীগ নেতা হাসান মাহমুদের তদবিরে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আমরানের বাড়ি রাউজান হবার সুবাধে হাসান মাহমুদ এই সুপারিশ করেছিলেন বলে জানা যায়। বিষয়টি আমরান হোছাইন নিজেও গর্ব করে অফিসের অন্যান্য অফিসার স্টাফদের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য উপস্থাপন করে বেড়াতেন। হাসান মাহমুদের প্রভাব দেখিয়ে অফিসে বিভিন্ন সময় অনিয়ম দুর্নীতিতেও জড়িয়েছেন বলে অধস্থনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপরেও সিন্ডিকেটের অপরাপর জেষ্ঠ্য কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আমরান ৫ আগস্টের পরে পদোন্নতি নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে আক্ষেপ করে জানান নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একাধিক চাকুরীপ্রার্থী। এব্যাপারে জানতে আমরান হোছাইনের মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
হ্যাকস/ইপার এর কক্সবাজারস্থ অফিসের ম্যানেজার সানজিদার বিরুদ্ধেও মিলেছে একই ধরণের অভিযোগ। তিনি তথ্য গোপন করে সার্ক্যুলার দিয়ে নিজের পছন্দের এবং পরিচিতজনদের নিয়োগ দিয়েছেন। গত বছরের ১২ অক্টোবর বিডি জবস ওয়েব সাইটে প্রতিষ্ঠানের নাম গোপন রেখে একটি সার্ক্যুলার পোস্ট করেন। উক্ত সার্ক্যুলার থেকে তিনি তার চেনাজানা ৩ সাবেক কলিগকে নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি তাদের সেই সব পদের জন্য যোগ্য দেখাতে সার্ক্যুলারে জব রিকোয়ারমেন্টে এনেছেন পরিবর্তন। রয়েছে আরোও নানাধরণের অসঙ্গতি। ত্রুটিপূর্ণ ওই সার্ক্যুলারে নিয়োগপ্রাপ্ত তিন সাবেক কলিগ হলেন- ময়মনসিংহের সোহাগ, বরিশালের সাহাব উদ্দিন এবং চট্টগ্রামের পিয়াল সরকার। আরও অভিযোগ উঠেছে- উচ্চ মানের বেতন হওয়া ওই তিনজনকে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ম্যানেজার সানজিদা প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। জানা গেছে- এই পদে বেতন ধরা হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এবং প্রথম দুই মাসের বেতন ঘুষ হিসেবে দিয়ে দিতে হবে ম্যানেজার সানজিদাকে। একই সময় নতুন পদ সৃষ্টি করে ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আরও ৪জনকে। তন্মধ্যে দুইজন ভীন জেলার ও বাকী দুইজন স্থানীয়। এছাড়াও গত তিনদিন আগে ৩ ফেব্রুয়ারী হাউজ কিপার ও ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর পদে নেওয়া হয়েছে আরও ৪ জন। এরা বেশিরভাগই জেলার বাহিরের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এভাবে নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে ক্রমাগত নিয়োগ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ সানজিদার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে সানজিদার সাথে কথা হলে তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান- সার্ক্যুলারে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না থাকলেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেমের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগের পেছনে তার ব্যাক্তিগত ভাবে কোনো হাত নেই। এবং তাদের নিয়োগে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগটিও কোনো ভাবেই সত্য নয়। তবে তিনি এটি স্বীকার করেছেন যে- নিয়োগপ্রাপ্ত ৩জনই তার সাবেক কলিগ ছিলো।
অভিযোগের ব্যাপারে আইএনজিও হ্যাকস/ইপার এর ইনচার্জ শাহ লিটনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।